মানুষের প্রিয় বই, মানুষের মতই, সারা জীবন বদলাতে থাকে। ছোটবেলায় যে বই ভালো লেগে থাকে, বড় হয়ে সেই বই ভালো নাও লাগতে পারে। তার কারণ মানুষের চিন্তাধারা সারা জীবন বদলাতে থাকে। ছোটবেলার চিন্তাধারা থেকে হয়তো বড় হয়ে মানুষে সম্পূর্ণ তার বিপরীত ভাবে। ফলে, প্রিয় বই হয়ত সারা জীবনের হয় না, বরঞ্চ মুহুর্তের হয়। ছোটবেলায় যে বই ভালো লাগে, বড় হয়েও সেই বই ভালো লাগলে হয়তো বলা যেতে পারে যে সেই বই সারা জীবন ধরেই প্রিয় বই। যে কোন মুহুর্তে মানুষের প্রিয় বই-এর তালিকার মধ্যে থাকে কয়েকটা সম্প্রতি পড়া বই ও কয়েকটা বই যার অল্প স্মৃতি থাকে যে সে বই এককালে ভালো লেগেছিল। সেই আগেকার পড়া বই এই মুহুর্তে আদৌ ভালো লাগবে কি না, তা বলা কঠিন।
এই বলে, এবার আমার কয়েকটা প্রিয় বই-এর তালিকা বানাতে চাই। তালিকায় কোন বই কোথায় আছে, তা, সেই বইটা কত ভালো লেগেছে তার উপর নির্ভরশীল নয়। যেটা আগে মনে এসেছে, সেটাই লিখেছি।
যখন স্কুলে পড়তাম, তখন স্কুলে অবস্থিত বই পড়তে ভালো লাগতে। হয়তো ছোট বেলায় তাই এই বইটা খুব ভালো লেগেছিল। ক্লাস ৮-এ পড়েছিলাম হয়তো। তার পর আর কখনও পড়িনি। কিন্তু তখন খুব ভালো লেগেছিলো।
এক বই অন্য বই-এর মত। তাই আলাদা করে কোন বই বিশেষ ভালো লাগতো না, কিন্তু সব বই-ই ভালো লাগতো, স্কুলে অবস্থিত বইগুলোও।
বইটা প্রথম পড়েছিলাম ২৫ বছর বয়সে, আজ থেকে ৪ বছর আগে। তার পড়ে আর পড়িনি, কিন্তু তখন খুব ভালো লেগেছিলো। লেখকের অন্য অনেক বই-ও পড়েছিলাম, কিন্তু এটাই সবচেয়ে ভালো লেগেছিলো।
প্রথম পড়েছিলাম হয়তো ১০ বছর বয়সে। তার পড়ে আবারও পড়েছি, কবে তা আর এখন ঠিক মনে নেই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক ব্যক্তিগত আখ্যান। বড় হয়েও আরেক বার পড়েছিলাম কিছু দিন আগেই। এখনও ভালো লাগে, যদিও ঔপনিবেশিক ভাবটা এখন বেশি চোখে পড়ে।
এই বইটার একটা সংক্ষিপ্ত সংস্করণ ক্লাস ৬-এ পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ছিলো, এবং ক্লাস ৯-এ গোটা সংস্করণটা পড়েছিলাম। বইটার শেষ পরিচ্ছেদটা খুব আবেগপ্রবণ ও ভালো লেগেছিলো। বাকি বইটাও খুব ভালো লেগেছিলো।
UG পড়ার সময় পাঠ্যপুস্তক হিসেবে বইটা ছিলো। বইটার ভাষা ও ভারতের কাহিনী পড়তে ভালো লেগেছিলো।
ক্লাস ১২-এ বইটা পড়েছিলাম। এখন আর খুব একটা মনে নেই, কিন্তু তখন খুব ভালো লেগেছিলো। এখন লেখিকার সাধারণ বক্তৃতা খুব বাজে লাগে কারণ তাতে ভুল তথ্য থাকে অনেক।
বইটা ক্লাস ৮/৯/১০-এ পড়েছিলাম প্রথম, তারপর আবার সম্প্রতি পড়লাম। খুব ভালো।
বইটা সম্প্রতি প্রথম বার পড়লাম। খুব ভালো লাগলো।
বইটা সম্প্রতি প্রথম বার পড়লাম। বইটার ভাষা যা নেড কেল্লির 'জেরিলডেরি লেটার'-এর ভাষার অনুকরণে লেখা, তা খুব ভালো লাগলো।
এই ছোট গল্পের সংকলন সম্প্রতি প্রথম বার পড়লাম। বইটার লেখার ধরন খুব ভালো লাগলো। শান্ত ভাব। তার মধেই অশান্তি। কিন্তু তার মধ্যেও শান্তি।
১৩। Toni Morrison
UG পড়ার সময়
Beloved (১৯৮৭) পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ছিলো। বইটার ভাষা ভালো লেগেছিলো। তারপরে Sula ও The Bluest Eye পড়েছিলাম। দুটোই খুব ভালো লেগেছিলো।
লেখকের ভাষাটা খুব সাধারণ লাগে। অতটা ভালো লাগে না। কিন্তু এই বইয় দুটো তাও পড়তে ভালো লেগেছিল যখন বইগুলো পড়েছিলাম। লেখকের সব বই-ই পড়েছি। এই দুটোই বাকিগুলোর চেয়ে ভালো লেগেছিলো। আরেকবার পড়লে লাগবে কি না, তা বলতে পারবো না।
যখন PG Wodehouse পড়তাম স্কুলে, তখনই এগুলোউ পড়েছিলাম। খুব ভালো লেগেছিলো।
বইটা খুব আঁটো। চলচ্চিত্রটা দেখার পর এই বইটা পড়েছিলাম। বইটা চলচ্চিত্রটার থেকেও বেশি ভালো লেগেছিলো। বাকি দুটো বই এই প্রথম বইটার চেয়ে কম আঁটো, একটু বেশি ছড়ানো। বইটার লেখকের নারীর শরীরের উপর অত্যাচারের বর্ণনা পড়তে গা শিউরে উঠেছিল/ অনেকে লিখেছিলো যে এই রকম বর্ণনা লেখা একটা পুরুষ লেখকের পক্ষে জটিল কারণ সে নিজেও এক ধরনের আনন্দ লাভ করছেন সেই লেখা থেকে। ব্যপারটা ভাবার মত।
বই-এর প্রধান চরিত্র যে এরকম ও হতে পারে, জানতাম না। বইটা ৫ বছর আগে পড়েছিলাম। এই তালিকায় এর পরের বই দুটোউ একই সময়ে পড়েছিলাম।
প্রভাবশালী বই। আমাকেও প্রভাব করেছে।
আমায় নতুন ভাবে ভাবিয়ে তুলেছিল।
গম্ভীর মানুষেরা যে এরকমও হতে পারে, তা জানতাম না। বইটা মনে হয় স্কুলের শেষ দিকে পড়েছিলাম। বড় হয়ে Feynman-এর নিজ-তৈরি ব্যক্তিত্ত্বের ব্যাপারে পড়ে ও Feynman-ও যে নিজের সময়কার পুরুষতন্ত্রের শিকার, তা বুঝে, বইটার ভালো লাগা অনেকটা কমে গিয়েছে, তবুও ছোট বেলায় খুব ভালো লেগেছিলো বইটা।
UG পড়ার সময় পাঠ্যপুস্তক হিসেবে বইটা ছিলো।
বইটা মনে হয় স্কুলের শেষ দিকে পড়েছিলাম। জনি ডেপ অভিনীত জে.এম. ব্যারির উপর চলচ্চিত্র দেখার পর। চলচ্চিত্রটা ও বইটা দুটোই খুব ভালো লেগেছিলো সেই বড় বয়সেও।
তিন বছর আগে পড়েছিলাম। খুব ভালো লেগেছিলো। দশটি কিশোর উপন্যাস নামে আনন্দ পাবলিশার্স-এর যে সংকলন আছে, তার বাকি গল্পগুলোউ তখন পড়েছিলাম। বেশ ভালো লেগেছিলো।
বড় বয়সে, UG পড়ার সময় পড়েছিলাম প্রথম বার। কিন্তু তাও খুব ভালো লেগেছিলো। ভাষার জন্য।
৩-৪ বছর বয়স থেকে হয়তো পড়তে শুরু করেছিলাম। এখনও মাঝে মাঝেই পড়ি। ছোট বেলায় এক ভাবে পড়তাম। বড় হয়ে আরও সমালোচক-এর দৃষ্টি নিয়ে পড়ি, কিন্তু তাও পড়ি এবং পড়তে ভালো লাগে।
ছোট বেলা থেকে একটু একটু করে পড়েছি। ভাষাটা খুব ভালো লাগে।
ছোট বেলায় একবার পড়েছিলাম। বছর খানেক আগে আরেকবার পড়েছিলাম। দ্রুত, আঁটো ভাবটা খুব ভালো লাগে।
MA পাশ করার পর পড়েছিলাম। ভাষাটা খুব ভালো লেগেছিলো।
বইটা আমি সবে সবে পড়া শেষ করলাম। কোথাও একটা নিজের জীবনের সাথে বেশ মিল খুঁজে পেলাম।
বইটা আমি কয়েক বছর আগে পড়েছিলাম। বইটার লেখার ভাষা আমার খুব ভালো লেগেছিলো। বইটার জীবন নিয়ে দর্শনটাও তীক্ষ্ণ।
৩১। Ernest Hemingway,
The Old Man and the Sea (১৯৫২)
Hemingway-এর লেখার ভাষা সরল হওয়ার জন্য প্রখ্যাত। তবে এই সারল্যের পিছনে চিন্তা ও দর্শনের গভীরতা আছে। সেই গভীরতাই এই উপন্যাসেও আছে। প্রধান চরিত্রের নিজের সাথে নিজের কথোপকথন এক আলাদা মাত্রার।
৩২।
রুশদেশের উপকথা (রাদুগা পাবলিশার্স)
বইটা একদম ছোট্ট বেলায় আমার প্রিয় বই ছিল। প্রথমে আমার মা আমাকে ও আমার দাদাকে পড়ে শোনাতো এবং পরে যখন আমি নিজে নিজে পড়তে শিখি, তখন নিজেই এই বইটা বারবার পড়তাম। এই বইটার ছবিগুলোউ আমার খুব ভালো লাগতো।বইটায় একটা গল্প ছিল ‘গোল রুটি’। সেই গল্পটা দুপুরে খাওয়ার আগে পড়লে, আমার রুটি, যেটা এমনিতে খেতে ভালো লাগতো না, সেটাও আকর্ষণীয় লাগতো। একটা গল্পে একটা চরিত্র মাংসের ঝোল খেতো। সেই গল্পটা পড়ার পর আমার নিজের ও মাংসের ঝোল খেতে ইচ্ছে করতো। অন্য অনেক বাঙালি বাচ্চাদের মত আমি ছোট বেলায় খুব বেশি সোভিয়েত বই পড়িনি। ছোট বেলায় মনে হয় শুধু এই বইটাই পড়েছিলাম। আর বড় হয়ে, এই রকম বই আমার পড়তে ভালো লাগতো না।
সংযোজন:
PhD শেষ করার পর বইটা পুরোটা পড়ার অবকাশ পেলাম। এর আগে যখন কিনেছিলাম, তখন পড়া শুরু করেও শেষ করতে পারিনি কারণ জীবনে তখন অত সময় ছিল না। বইটা ভালো লেগেছিলো। এর পরেই Anna Karenina-ও পড়েছিলাম। Anna Karenina ভালো লাগলেও War and Peace বেশি ভালো লেগেছিলো।
উপন্যাসটায় কোন চরিত্রের নাম নেই। প্রথম-ব্যক্তি কাহিনীকথন পদ্ধতিতে লেখা। কাহিনীকথনের ধরনটাও stream of consciousness আকারে। কাহিনীর বক্তা একজন মহিলা। মহিলাদের জীবনের দিকে তাকানোর দিক্কে ক্ষীণ ভাবে তুলে ধরে এই উপন্যাস। খুব ভালো লেগেছে ভাষাটা। Peter Carey’র
True History of the Carey Gang-এর মত, Anna Burns-এর এই উপন্যাসের ভাষাটাও অন্যান্য লেখার থেকে বেশ আলাদা। দুটোই বুকার পুরষ্কার জিতেছে।
৩৭। Henry Fielding,
Tom Jones (১৭৪৯)
উপন্যাসটা সম্প্রতি পড়লাম। ভাষার ব্যবহার খুব ভালো লাগলো। বেশ মজার। গল্পটাও বেশ ভালো।
৩৮। David Attenborough,
Life on Earth (১৯৭৯, সংশোধিত ২০১৮)
বইটা সম্প্রতি পড়লাম। বিষয় নির্ণয়, বিষয় সাজানো ও ভাষার ব্যবহার খুব ভালো লাগলো। সহজ ভাবে জটিল ব্যপার বোঝানো আছে বইটিতে। অনেক নতুন জিনিস জানলাম বইটি পড়ে।
৩৯। William Shakespeare, সমগ্র
করোনাভাইরাস মহামারীর জন্য বাড়িতে বসে থাকায় এটা পড়ে শেষ করলাম। হয়তো আপাতত আমার পড়া সব চেয়ে বড়/ লম্বা বই। বইটার কে লেখক তা নিয়ে প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই একটা বিতর্ক রয়ে গেছে। যেই লিখে থাকুক না কেন, বইটা War and Peace-র মত যুদ্ধ নিয়ে হলেও শান্তি বজায় রাখার জন্য সব চেয়ে জোড়ালো প্রার্থনা করে আমি মনে করি। শান্তি ও Quiet চায়ে ডন নদীর পাশে থাকা মানুষেরা। বইটা এত লম্বা মাঝে মাঝে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলছিলাম কিন্তু পড়তেও ভালো লাগছিলো। লেখক কিছুকেই ভালো বলে না বা খারাপ বলে না। চরিত্ররা বলে, কিন্তু কোন চরিত্র-ই সম্পূর্ণ ভালো না বা খারাপ না। ফলে, পাঠক কোন চরিত্র বা কোন আচরণ কে পছন্দ করবে, সেটা পাঠকের ব্যাপার। এই কারণেই হয়তো বইটা কমিউনিস্টরাও পছন্দ করতো যদিও আমার মনে হয় বইটা কমিউনিস্মকে প্রশংসা করে না বা কমিউনিস্মের ব্যপারে কিছু খারাপ-ও বলে না।
২০২৩ সালে এই বইটা পড়েছিলাম। ২০১২-তে সিদ্ধার্থ মুখার্জীর The Emperor of All Maladies: A Biography of Cancer (২০১০) পড়েছিলাম ২০১২ সালে কারণ তখন জীবনে এই রোগ দেখছিলাম। পরে সিদ্ধার্থ মুখার্জীর The Laws of Medicine: Field Notes from an Uncertain Science (২০১৫) এবং The Gene: An Intimate History (২০১৬) -ও পড়েছিলাম। তারপর এ রকম বই আর পড়ি নি। ফের ২০২৩ এ আবার এই রোগের সম্মুখিন হয়ে এই সব পড়তে শুরু করেছিলাম। প্রথমে Atul Gawande'র Complications: A Surgeon's Notes on an Imperfect Science (২০০২) পড়লাম। তারপর সিদ্ধার্থ মুখার্জীর The Laws of Medicine: Field Notes from an Uncertain Science-টাও আরেকবার পাতা উলটে দেখে নিলাম যে দুটো বইয়ের বক্তব্য মোটামুটি একই রকম। এর পর Atul Gawande'র Better: A Surgeon's Notes on Performance (২০০৮) ও Being Mortal--দুটোই পড়লাম। এবং সিদ্ধার্থ মুখার্জীর The Song of the Cell: An Exploration of Medicine and the New Human (২০২২)-ও পড়েছিলাম। তবে Being Mortal বইটা পড়ে জীবন সম্পর্কে নতুন ভাবে ভাবতে শিখেছিলাম বলে ওটাই হয়তো আমার সব চেয়ে ভালো লেগেছিলো।
২০২৪ সালে এই বইটা পড়লাম। খুব ভালো লাগলো। অনেক চরিত্র-র সঙ্গেই নিজের মিল খুঁজে পেলাম। মি. ব্রুকের দ্বিধা, মি. কেসাবনের নিষ্ফল পড়াশোনা, ডরোথিয়ার মনের যাত্রা, লিডগেটের বিয়ের পরে স্বপ্নভঙ্গ, রসামন্ড-এর কথা না শোনা, বালস্ট্রোডের নিজের অতীত লুকানোর প্রয়াস--এই সকল এর সঙ্গেই মিল খুঁজে পেলাম।